জনপ্রিয় সেরা ১০টি choto golpo bangla
আসালামালাইকুম বন্ধুরা, আজকে আমরা জনপ্রিয় ১০ choto golpo bangla নিয়ে কথা বলবো। পুরো পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন আশা করি অনেক মজা পাবেন এবং অনেক ভালো লাগবে। এই পোস্টে আমরা দশটি সেরা choto golpo রেখেছি। চলুন বেশি কথা না বলে গল্পগুলো আমরা পড়ি
সেরা ১০টি choto golpo গুলো হলোঃ-
- কাবুলিওয়ালা
- পোস্টমাস্টার
- লালু
- তালনবমি
- হরিচরণ
- ছোটো বকুলপুরের যাত্রী
- বাবার জন্মদিন
- রস
- আশচর্য বাণিজ্য
- আত্মারামের মৃত্যু
নিচে সবগুলো গল্প দেওয়া আছে নিচে থেকে গল্পগুলো পড়ে নিন এবং মজা নিয়ে..
প্রথম গল্পঃ কাবুলিওয়ালা
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমার ছোট মেয়েটির নাম মিনি। সে সব সময় বকবক করতে ভালোবাসে। এক মুহূর্ত চুপ করে থাকতে পারে না। মিনি একদিন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে হঠাৎ এক কাবুলিওয়ালাকে দেখে। কাবুলিওয়ালা একজন আফগান, কাবুল থেকে এসেছে এবং তার হাতে থাকে বাদাম ও শুকনো ফলের বোঝা। মিনির মনে হলো, সে তার সাথে কথা বলতে চায়, তাই সে চিৎকার করে ডাক দিল, “কাবুলিওয়ালা! কাবুলিওয়ালা!”
কাবুলিওয়ালা সেই ডাক শুনে হেসে আমাদের বাড়ির দিকে এগিয়ে এলো। মিনি তখন তার দিকে অনেক প্রশ্ন ছুড়ে দিল, “তুমি কোথায় যাচ্ছ?” “তোমার থলে তে কী আছে?” কাবুলিওয়ালা মজা করে সব প্রশ্নের উত্তর দিল। এভাবে কাবুলিওয়ালার সঙ্গে মিনির এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। রহমত (কাবুলিওয়ালার নাম) প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসত, মিনি’র সাথে গল্প করত এবং তাকে শুকনো ফল দিত।
মিনি এবং রহমতের এই সম্পর্কের মধ্যে একটা বিশেষ বন্ধন ছিল, যদিও তারা একে অপরের ভাষা পুরোপুরি বুঝতে পারত না। মিনি ছিল রহমতের নিজের ছোট মেয়ের মতো, যাকে সে কাবুলে রেখে এসেছে। এই সম্পর্ক তাদের দুজনের মধ্যে এক ধরনের সান্ত্বনা ও ভালবাসার প্রতীক হয়ে ওঠে।
কিন্তু একদিন, এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটল। রহমত এক ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় এবং তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং কারাগারে পাঠানো হয়।
বছরের পর বছর কেটে গেল। মিনি বড় হতে লাগল। তার বিয়ের দিন এসে গেল। বিয়ের প্রস্তুতি চলছে, আর সেই সময় রহমত জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। সে ভাবল, মিনি এখনও ছোটই রয়েছে। কিন্তু এসে দেখে মিনি এখন বড় হয়েছে, আর তাকে চিনতে পারছে না।
রহমত উপলব্ধি করল যে তার নিজের মেয়েটিও এই সময়ে বড় হয়ে গেছে, আর সেও হয়তো তাকে ভুলে গেছে। রহমতের মন ভারাক্রান্ত হলো। আমি তার দুঃখ বোঝার চেষ্টা করলাম এবং তাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করলাম, যেন সে তার নিজের মেয়ের সাথে দেখা করতে কাবুল ফিরে যেতে পারে।
দ্বিতীয় গল্পঃ পোস্টমাস্টার
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছোট্ট এক গ্রাম, যেখানে নতুন পোস্টমাস্টারকে বদলি করে আনা হয়। শহুরে পরিবেশে বড় হওয়া পোস্টমাস্টার এই গ্রামের একঘেয়েমিতে অসহায় বোধ করতে লাগলেন। তিনি একাকী, নিঃসঙ্গ এবং গ্রামটির সঙ্গে কোনোভাবেই মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। চারদিকে সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য, কিন্তু তার মনের মধ্যে ছিল নীরবতা ও বিরক্তি। পোস্ট অফিসটি গ্রামের এক কোণে ছিল, যেখানে শুধু তিনি এবং তার সহকারী রতন কাজ করত।
রতন ছিল একটি অনাথ মেয়ে, যার বয়স খুবই কম। সে পোস্টমাস্টারের সাথে কাজ করত এবং তার সব ধরনের কাজের সহযোগী ছিল। পোস্টমাস্টার প্রথমে তার সাথে খুব বেশি কথা বলতেন না, কিন্তু ধীরে ধীরে একাকীত্বের কারণে তিনি রতনের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। তাদের মধ্যে এক ধরনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে লাগল। পোস্টমাস্টার রতনকে গল্প শোনাতেন, তাকে পড়তে শিখাতেন, এবং এক সময় তাদের সম্পর্ক এক গভীর বন্ধনে পরিণত হলো। রতনও তাকে নিজের পরিবারের একজন সদস্যের মতো ভাবতে শুরু করল। পোস্টমাস্টার তাকে তার জীবনের অনেক গল্প বলতেন, শহরের কথা বলতেন, আর রতন মনোযোগ দিয়ে সেসব শোনত। choto golpo bangla
পোস্টমাস্টারও রতনের জীবন সম্পর্কে জানতে পারলেন। রতন তার বাবা-মা, ভাইয়ের কথা পোস্টমাস্টারকে শোনাতো, যদিও তারা অনেক আগেই মারা গেছে। সে যেন নতুন করে জীবনের মায়া অনুভব করল পোস্টমাস্টারের মাধ্যমে।
কিন্তু এই বন্ধুত্বের মায়া বেশিদিন স্থায়ী হলো না। পোস্টমাস্টার গ্রামের জীবন থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন এবং কর্তৃপক্ষকে বদলির জন্য চিঠি লিখলেন। বদলির আদেশ না পাওয়ায় তিনি অবশেষে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। পোস্টমাস্টার যখন রতনকে বললেন যে তিনি গ্রাম ছেড়ে চলে যাবেন, তখন রতন গভীরভাবে আহত হলো। সে ভাবল পোস্টমাস্টার তাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে। কিন্তু পোস্টমাস্টার তা কখনোই ভাবেননি।
রতন তার চোখে জল নিয়ে পোস্টমাস্টারকে বলল, “তুমি আমাকে নিয়ে যাবে?” কিন্তু পোস্টমাস্টার মৃদু হেসে তাকে সান্ত্বনা দিলেন এবং বললেন, “আমার পরে অন্য কেউ আসবে, তার সাথে থেকো।” পোস্টমাস্টার চলে গেলেন, আর রতন বারবার তার ফিরে আসার আশায় তাকিয়ে রইল। কিন্তু পোস্টমাস্টার আর ফিরে এলেন না।
গল্পটি শেষ হয় পোস্টমাস্টারের একটি চিন্তা দিয়ে—জীবনে কত সম্পর্কই তো এভাবে শেষ হয়, কিছুই করার থাকে না। জীবনের স্রোত চলতে থাকে, মানুষ আসে আর যায়, আর আমরা কেবল বেঁচে থাকি স্মৃতির ভারে।
তৃতীয় গল্পঃ লালু
লেখক: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
লালু গল্পটি একজন দুরন্ত ও দুষ্টু বালককে কেন্দ্র করে আবর্তিত। লালু নামের এই ছোট ছেলেটি গ্রামের সকলের কাছে পরিচিত তার চঞ্চল স্বভাবের জন্য। লালু ছিল একেবারে বেপরোয়া ধরনের, যা দেখে অনেকেই বিরক্ত হতেন, কিন্তু তার মধ্যে ছিল এক ধরনের নিষ্পাপ সরলতা, যা তাকে সবার প্রিয় করে তুলেছিল।
লালুর বয়স অল্প হলেও তার কাজকারবার ছিল বড়দের মতো। সে সারাক্ষণ কিছু না কিছু করে সময় কাটাতো। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে সে তাদের পাশে দাঁড়াতো, কেউ বিপদে পড়লে সাহায্য করার চেষ্টা করত। যদিও তার উপায়গুলো বেশিরভাগ সময় ভুলভাল বা অতিরঞ্জিত হতো, তবুও তার আন্তরিকতা ছিল নিখাদ।
একদিন গ্রামের এক মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মেয়েটির নাম ছিল ঝুমা, লালুর খুব কাছের বন্ধু। সে ঝুমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। ডাক্তার আসতে দেরি করছে দেখে লালু নিজেই কিছু করার পরিকল্পনা করল। সে গ্রামের চারপাশে ছোটাছুটি করে বিভিন্ন ওষুধ ও গাছপালা সংগ্রহ করতে শুরু করল। তার মনে হয়েছিল, সে নিজেই ঝুমাকে সারিয়ে তুলতে পারবে। এই ঘটনায় গ্রামবাসীর কেউ কেউ বিরক্ত হলো, কারণ তারা জানতো লালুর এসব কর্মকাণ্ড কখনোই ঠিকঠাক কাজে লাগবে না।
লালু সেদিন সারাদিন চেষ্টার পরও ঝুমার অবস্থা ভালো করতে পারল না। পরিশেষে, ডাক্তার এসে উপস্থিত হলো এবং ঝুমার চিকিৎসা শুরু করল। ডাক্তার ওষুধ দিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলল, আর লালু মন খারাপ করে ভাবতে লাগল, তার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ঝুমা সুস্থ হওয়ার পর লালুর কাছে এসে বলল, “তুই পাশে ছিলি বলেই আমি ভালো হয়ে গেছি, লালু।”
লালুর মন তখন উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে বুঝল, তার চেষ্টার মধ্যেও ভালোবাসার দাম আছে। লালুর দুষ্টুমি এবং সরলতা সবই ছিল মানুষের জন্য, আর এটাই তাকে সবার প্রিয় করে তুলেছিল।
চতুর্থ গল্পঃ তালনবমি
লেখক: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
তালনবমি গল্পটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম জনপ্রিয় ছোট গল্প, যা গ্রামীণ জীবনের বাস্তব চিত্র এবং সমাজের শোষণমূলক কাঠামোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। গল্পটি এক কৃষক পরিবারের দুঃখ-কষ্ট ও বেঁচে থাকার সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।
গল্পের প্রধান চরিত্র হরলাল, একজন দরিদ্র কৃষক। তার স্ত্রী পুটু এবং একমাত্র সন্তান শিবু। তারা একেবারেই নিঃস্ব, জমি বলতে কেবল সামান্য কয়েক বিঘা। কিন্তু এই জমিতে চাষাবাদ করে তারা বাঁচার উপায় খুঁজে পায় না। হরলালের একমাত্র আশা তার জমির ধান, যেটি সে সারাবছর ধরে ফলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ঋতুর দোষে বা ফসলের দুর্ভাগ্যবশত, বেশিরভাগ বছরই তার ফসল ভাল হয় না। choto golpo bangla
এ বছর ফসল কিছুটা ভালো হয়েছে, তাই হরলাল আশা করে যে এবার তাদের কিছুটা সচ্ছলতা আসবে। কিন্তু তখনই গল্পের মূল সংকট দেখা দেয়। হরলালের জমির ধান কেটে আনার সময় হয় “তালনবমি”। এটি এমন একটি সময়, যখন জমিদার তার প্রাপ্য পায়—ফসলের ভাগ নিতে আসে। হরলালের জমিদার একজন কঠোর এবং নিষ্ঠুর ব্যক্তি, যিনি দরিদ্র কৃষকদের ন্যূনতম সহানুভূতিও দেখান না।
হরলালের স্ত্রী পুটু তাকে অনেক অনুরোধ করে জমিদারকে কিছুটা কম ফসল দিতে, যাতে তারা নিজেদের জন্য কিছু রাখতে পারে। হরলাল প্রথমে সাহস করে জমিদারকে এ বিষয়ে বলতে চায়, কিন্তু জমিদারের ভয়ে সে কিছুই বলতে পারে না। জমিদার এসে তার পুরো প্রাপ্য নিয়ে যায়, এবং হরলালের পরিবার সেই ফসল থেকে প্রায় কিছুই পায় না।
গল্পের শেষ দিকে, হরলাল ও তার পরিবারকে কষ্ট এবং অনাহারের মুখোমুখি হতে হয়। তারা সব কিছু হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে, কিন্তু গ্রামীণ জীবনের এই চক্র থেকে তারা মুক্তি পায় না। জমিদারের শোষণের কারণে তাদের জীবন চিরস্থায়ী দুঃখ-কষ্টে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।
পঞ্চম গল্পঃ হরিচরণ
লেখক: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
হরিচরণ গল্পটি একজন বিশ্বস্ত চাকর এবং তার মনিবের প্রতি তার আজীবন নিরলস সেবার করুণ কাহিনি। এটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি হৃদয়স্পর্শী গল্প, যেখানে বিশ্বস্ততা, ভালোবাসা, এবং বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়গুলো খুব সূক্ষ্মভাবে ফুটে উঠেছে।
গল্পের প্রধান চরিত্র হরিচরণ একজন বিশ্বস্ত ও সৎ চাকর। সে তার মনিবের পরিবারের সাথে অনেক বছর ধরে ছিল, এবং তাদের পরিবারের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল নিখাদ। হরিচরণ তার মনিবের বাচ্চাদের বড় করে তুলেছে, তাদের দেখাশোনা করেছে, এবং সংসারের সব কাজ-কর্ম একাই সামলে এসেছে। পরিবারটি তাকে পরিবারের একজন সদস্যের মতোই গণ্য করত, আর হরিচরণও তাদের সেবা করতে নিজেকে নিঃস্বার্থভাবে উৎসর্গ করেছিল।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হরিচরণও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, কিন্তু সে কখনো নিজের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়নি। সে এখন আগের মতো কাজ করতে পারত না, কিন্তু তবুও চেষ্টা করত যাতে পরিবারের জন্য সে কিছু করতে পারে। তার বিশ্বস্ততা এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা এতটাই গভীর ছিল যে, পরিবারের ছোট থেকে বড় সকলেই তাকে সম্মানের চোখে দেখত।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিবারের অবস্থাও বদলে যেতে শুরু করল। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বড় হতে লাগল, এবং তাদের জীবনধারা এবং মনোভাবেও পরিবর্তন আসতে লাগল। তারা হরিচরণের মতো একজন বয়স্ক এবং দুর্বল ব্যক্তির আর প্রয়োজন অনুভব করল না। পরিবারের নতুন প্রধান, যিনি আগে হরিচরণের স্নেহে বড় হয়েছিলেন, এখন তার প্রতি আর আগের মতো মমতা দেখাতে পারছিলেন না। তাদের কাছে হরিচরণ তখন শুধুমাত্র এক অপ্রয়োজনীয় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
একদিন, হরিচরণ অসুস্থ হয়ে পড়ল এবং আর কাজ করতে পারল না। সে ভেবেছিল, তার দীর্ঘদিনের সেবা এবং ভালোবাসার কারণে মনিব তার যত্ন নেবে এবং তাকে জীবনের শেষ দিনগুলোতে একটু শান্তি দেবে। কিন্তু তার বিশ্বাস ভঙ্গ হলো যখন তার মনিব তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন, কারণ তারা আর তার খরচ বহন করতে চাইলেন না। choto golpo bangla
হরিচরণ ভগ্ন হৃদয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। তার মনিবের প্রতি তার অসীম ভালোবাসা ও সেবার প্রতিদান ছিল শুধুমাত্র পরিত্যাগ। সে বিশ্বাস করেছিল যে, তার জীবনের সবকিছুই তার মনিবের পরিবার, কিন্তু শেষে সে পেয়েছিল নিঃসঙ্গতা ও অপমান।
ষষ্ঠ গল্পঃ ছোটো বকুলপুরের যাত্রী
লেখক: বনফুল
ছোটো বকুলপুরের যাত্রী বনফুলের একটি চমৎকার ছোট গল্প যা গ্রামীণ জীবনের একটি মজার এবং হৃদয়স্পর্শী দিক তুলে ধরে। গল্পটি মূলত একজন শহুরে ব্যক্তি এবং একটি ছোট গ্রাম বকুলপুরের মধ্যে ঘটে যাওয়া এক অপ্রত্যাশিত যাত্রার কাহিনি।
ছোটো বকুলপুর নামে একটি ছোট গ্রাম রয়েছে। শহর থেকে কিছু দূরে অবস্থিত এই গ্রামের জীবন খুবই সাদামাটা এবং শান্ত। একদিন, শহরের একজন ধনী ব্যক্তি, বিষ্ণু নামের এক ব্যবসায়ী, তার কাজের জন্য বকুলপুরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। বিষ্ণুর সফরটি মূলত কিছু জমি ক্রয় করতে হবে এমন কারণে।
বিষ্ণু গ্রামে এসে দেখে, গ্রামটির দৃশ্য একেবারে নতুন তার জন্য। শহরের নানা অত্যাধুনিক সুবিধার পর তিনি গ্রামীণ জীবনের সরলতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হয়ে পড়েন। তবে, গ্রামে এসে তার অভিজ্ঞতা ছিল কিছুটা অপ্রত্যাশিত।
বিষ্ণুর যাত্রা ঠিকমতো সম্পন্ন করার জন্য একটি গাড়ি ঠিক করা হয়, কিন্তু তা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আনুষঙ্গিক কাজের অভাবে ঠিকমতো কাজ করতে পারছিল না। ফলে, বিষ্ণু ঠিক সময়ে গ্রাম থেকে বের হতে পারছিলেন না। এর মধ্যেই গ্রামের মানুষজন, যারা বিষ্ণুর শহুরে বৈশিষ্ট্য ও অদ্ভুত আচরণকে নিয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠেছিল, তার সাথে নানা রকম মজার ঘটনা ঘটাতে শুরু করে।
গ্রামের মানুষজন বিষ্ণুকে গ্রামের বিভিন্ন চমৎকার স্থানগুলো ঘুরিয়ে দেখানোর প্রস্তাব দেয়, যা তাকে বেশ আনন্দ দেয়। বিষ্ণু তাদের সাথে খেতে, আড্ডা দিতে এবং গ্রামীণ জীবন উপভোগ করতে থাকে। নানা ছোট ছোট ঘটনায় বিষ্ণু বুঝতে পারে যে, গ্রামীণ জীবনের সরলতা এবং মানুষের আন্তরিকতা তার শহুরে জীবনের গ্ল্যামার এবং জটিলতার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।
বিষ্ণু গ্রামে কাটানো সময়ের পর বুঝতে পারে যে, শহরের কোলাহল এবং প্রচলিত জীবনযাত্রার বাইরে একটি শান্ত, সরল গ্রামীণ জীবনও কতটা আনন্দদায়ক হতে পারে। অবশেষে, বিষ্ণু শহরের ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়, কিন্তু তার মনে গ্রামবাসীদের প্রতি একটি অদ্ভুত ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা থেকে যায়।
সপ্তম গল্পঃ বাবার জন্মদিন
লেখক: বনফুল
বাবার জন্মদিন বনফুলের একটি হৃদয়স্পর্শী ছোট গল্প যা বাবা-মেয়ের সম্পর্ক এবং একটি নির্দিষ্ট দিন, বাবার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এই গল্পটি একটি ছোট মেয়ের কাছে তার বাবার প্রতি অগাধ ভালোবাসার এবং সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে।
গল্পের নায়ক নূপুর নামের এক ছোট মেয়ে, যে গ্রামে তার বাবার সাথে থাকে। বাবার নাম বনমালী, তিনি একজন কৃষক। নূপুরের বাবা-মা দুই জনই সৎ ও নির্ভীক মানুষ। তাদের পারিবারিক জীবন খুবই সাদামাটা হলেও, তাদের সম্পর্ক মধুর এবং আন্তরিক।
নূপুর বাবার জন্মদিনের দিন বিশেষ কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে জানে, তার বাবা সাধারণভাবে কোনো বিশেষ উদযাপন বা উপহার পছন্দ করেন না। কিন্তু তার মন খুবই প্রীত এবং সে চায় তার বাবার জন্য কিছুটা আনন্দের ব্যবস্থা করতে।
নূপুর সকালে ওঠে এবং প্রচুর পরিমাণে ফুল সংগ্রহ করে। সে সেগুলো সুন্দরভাবে সাজায় এবং বাবার জন্য একটি ছোট্ট গোলাপের তোড়া তৈরি করে। সে বাবার জন্য একটি মিষ্টি পুডিংও প্রস্তুত করে, যদিও এটি খুব সাধারণ উপাদান দিয়ে তৈরি, তবে নূপুরের মনে এটি বিশেষ।
বিকেলে, যখন বাবা বাড়িতে ফিরে আসে, সে দেখতে পায় নূপুর একটি সুন্দর ফুলের তোড়া এবং পুডিং নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূপুর বাবাকে পুডিং ও ফুল উপহার দেয় এবং বাবা আনন্দিত হয়ে ওঠেন। যদিও বাবার মুখে কোনো বড় মন্তব্য নেই, তার চোখের খুশি ও সন্তুষ্টির প্রকাশ প্রমাণ করে যে সে খুবই খুশি।
বাবার জন্মদিনের সন্ধ্যায়, নূপুর বাবার সামনে বসে এবং তার জন্য একটি ছোট নাটকও করে, যা সে নিজে লিখেছে। নাটকটির মধ্যে বাবা-মেয়ের সম্পর্ক এবং পরিবারের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটি দেখে বাবার চোখে পানি চলে আসে, এবং তিনি অনুভব করেন যে তার মেয়ে তার ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পারে। choto golpo bangla
গল্পের শেষে, বাবা-মেয়ের এই বিশেষ দিনটি তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত বন্ধন এবং ভালোবাসা সৃষ্টির সাক্ষী হয়ে ওঠে। বাবা-মেয়ের সম্পর্কের এই ছোট্ট দিনটি তাদের জীবনের একটি মধুর স্মৃতি হয়ে থাকে।
অষ্টম গল্পঃ রস
লেখক: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
রস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি অন্যতম জনপ্রিয় ছোট গল্প, যা মানুষের জীবন, সমাজ, এবং মনস্তাত্ত্বিক জটিলতাগুলোর একটি গভীর ও চিন্তাশীল বিশ্লেষণ। এই গল্পের মাধ্যমে মানব চরিত্রের নানা দিক এবং সামাজিক পরিসরের পারস্পরিক সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র চঞ্চল। চঞ্চল একজন সৎ ও পরিশ্রমী তরুণ। সে একটি গ্রামে থাকে এবং তার জীবনযাত্রা অত্যন্ত সাদামাটা। চঞ্চল সমাজে একটি প্রতিষ্ঠিত সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত, কিন্তু তার জীবনের এক অংশ হঠাৎ পরিবর্তিত হয়ে যায় যখন সে এক শহুরে মহিলার সাথে পরিচিত হয়।
একদিন, চঞ্চল শহরে কাজের জন্য যায়। সেখানে সে এক অভিজাত ক্লাবে গিয়ে দেখল একটি পার্টি চলছে। পার্টির আয়োজক একজন শহুরে মহিলা, কুমুদবালা, যিনি সুলক্ষণ এবং সমাজের উচ্চশ্রেণীর সদস্য। কুমুদবালা পার্টির জন্য বিভিন্ন ধরণের সুন্দর রস পরিবেশন করেছেন, যা দেখে চঞ্চল মুগ্ধ হয়ে যায়। কুমুদবালার হাতে রসের এই বিশেষত্ব দেখে, চঞ্চল জানাল যে, গ্রামের মানুষও এমন রস তৈরি করতে পারে, কিন্তু তাদের তা মূল্যায়িত হয় না।
কুমুদবালা চঞ্চলকে চ্যালেঞ্জ দেয়, যে সে যদি গ্রামে গিয়ে এই রস তৈরির দক্ষতা প্রদর্শন করে, তবে সে তার প্রতি মূল্য দিতে পারবে। চঞ্চল গ্রামে ফিরে গিয়ে চেষ্টা করে নতুন রস তৈরির কৌশল শিখতে। তার প্রচেষ্টার ফলে, সে একটি নতুন ধরনের সুস্বাদু রস তৈরি করতে সক্ষম হয় যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
যখন চঞ্চল আবার শহরে ফিরে আসে এবং কুমুদবালার সামনে তার রস উপস্থাপন করে, তখন কুমুদবালা তার কৃতিত্ব মেনে নেয় এবং চঞ্চলকে শ্রদ্ধা জানায়। কুমুদবালা বুঝতে পারে যে, রসের মূল্যের মুল্যায়ন শুধুমাত্র তার সাজসজ্জা বা প্রদর্শনের উপর নির্ভর করে না, বরং তার প্রকৃত স্বাদ এবং প্রণালীও গুরুত্বপূর্ণ।
নবম গল্পঃ আশচর্য বাণিজ্য
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আশ্চর্য বাণিজ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অনন্য গল্প যা মানব চরিত্রের খুঁটিনাটি দিক এবং বাণিজ্যের জগতে এক বিশেষ রহস্যময় উপাদানকে কেন্দ্র করে রচিত। গল্পটি মূলত মিথ্যাবাদী ও কুটিল বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে লেখা, যা মানুষের বিশ্বাস ও প্রতারণার মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধরে।
গল্পের প্রধান চরিত্র প্যারী একটি ছোট শহরের ব্যবসায়ী। সে তার ছোট দোকানে নানা ধরনের অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক বস্তু বিক্রি করে, যা কিনা শহরের মানুষদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। প্যারীর দোকানটি শহরের সকলের কাছে এক ধরনের রহস্যময় স্থান হয়ে উঠেছে। দোকানের সামগ্রীর মধ্যে এমন কিছু বস্তু থাকে যা সাধারণভাবে পাওয়া যায় না, এবং সেগুলির প্রতিটি জিনিসের সাথে সম্পর্কিত থাকে একটি বিশেষ কাহিনি বা মিথ।
একদিন, শহরে এক গুরুত্বপূর্ণ ভদ্রলোক প্রকৃতিস্বামী দোকান পরিদর্শন করতে আসে। তার আকর্ষণ বিশেষ করে প্যারীর দোকানের রহস্যময় বস্তু নিয়ে। প্রকৃতিস্বামী প্যারীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে শুরু করেন, এবং প্যারী তার চমকপ্রদ উত্তর দিয়ে তাকে মুগ্ধ করে।
এক পর্যায়ে, প্রকৃতিস্বামী জানতে পারে যে, প্যারী একটি বিশেষ ধরনের দুধের বাণিজ্য করে যা কিনা সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্যারী দাবি করে যে, এই দুধ পান করলে মানুষের জীবন বদলে যেতে পারে এবং তাদের সকল সমস্যা মিটে যেতে পারে। choto golpo bangla
প্রকৃতিস্বামী যখন জানতে পারে যে, প্যারীর দোকানের সবকিছু কেবল প্রতারণা এবং মিথ্যা ভিত্তিক, তখন সে ক্ষুব্ধ হয়ে প্যারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু প্যারী তার কৌশল এবং চমকপ্রদ বক্তৃতার মাধ্যমে প্রকৃতিস্বামীকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, আসলে তার দোকানের সবকিছু শুধুমাত্র মানুষের মনের কৌতূহল এবং বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে। প্রকৃতিস্বামী বুঝতে পারে যে, মানুষের বিশ্বাস ও মিথ্যাচার আসলে একটি ব্যবসার অংশ হতে পারে।
দশম গল্পঃ আত্মারামের মৃত্যু
লেখক: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
আত্মারামের মৃত্যু শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ছোট গল্প, যা মানব জীবনের দুর্বলতা, হতাশা এবং আত্মসন্মান সংক্রান্ত বিষয়গুলো গভীরভাবে অন্বেষণ করে। গল্পটি মূলত একজন ব্যক্তি ও তার আত্মমর্যাদার বিষয় নিয়ে চিত্রিত।
আত্মারাম গল্পের প্রধান চরিত্র, একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তিত্ব। আত্মারামের জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল তার আত্মমর্যাদা রক্ষা করা এবং সামাজিক সম্মান অর্জন করা। সে অনেক কঠোর পরিশ্রম করে একটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছে, কিন্তু তার আত্মমর্যাদা ও সম্মান তাকে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন করে তোলে।
একদিন, আত্মারাম একটি বড় শহরে ব্যবসার উদ্দেশ্যে যায়। শহরে এসে তার সাথে পরিচয় হয় মোহনলাল নামের এক ধনী ব্যবসায়ী সাথে, যিনি আত্মারামের কাছ থেকে কিছু পণ্য কিনতে চান। কিন্তু এই পণ্যের জন্য মোহনলাল তার মূল্য কম দিতে চাইছেন। আত্মারাম, নিজের আত্মমর্যাদার কারণে, মোহনলালের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
সেখানে একটি দৃশ্য ঘটে, যেখানে আত্মারাম ক্ষিপ্ত হয়ে মোহনলালকে চ্যালেঞ্জ করে এবং নিজেকে প্রমাণ করতে চায়। মোহনলাল তার আত্মসম্মান ভাঙতে চায় এবং আত্মারামকে একটি অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে দেয়। আত্মারাম, তার আত্মসম্মান রক্ষার জন্য, টাকা পয়সা এবং ব্যবসার সমস্ত সম্ভাবনা হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
কিছুদিন পর, আত্মারাম গ্রামে ফিরে আসে এবং জানতে পারে যে, তার ব্যবসা মন্দার কারণে ভেঙে পড়েছে। তার পরিবার ও সমাজ তাকে অসম্মানিত করে এবং তার অবস্থার অবনতি ঘটে। আত্মারাম এক ধরনের হতাশা ও অভিমান নিয়ে দিন কাটাতে থাকে। তার মনোযোগ ও শান্তি হারিয়ে যায়।
গল্পের শেষাংশে, আত্মারাম অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার মৃত্যু ঘটে। তার মৃত্যুর পর, তার আত্মমর্যাদা এবং সম্মানের সব চেষ্টা ব্যর্থ মনে হয়। তার পরিবার ও সমাজ তার প্রতি কেমন আচরণ করেছে, তাও তার মৃত্যুর পর বুঝতে পারে।
তো বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই পরবর্তী কোনো পোস্টে আরো choto golpo bangla নিয়ে কথা বলব। ধন্যবাদ সবাইকে